গর্ভাবস্থায় বায়ু দূষণের প্রভাব মা এবং বাচ্চা, উভযের উপরই মারাত্মকভাবে পরে। বিশেষত দূষিত বায়ুর মধ্যে থাকার কারণে জন্মের সময় বাচ্চার নানাব...
গর্ভাবস্থায় বায়ু দূষণের প্রভাব মা এবং বাচ্চা, উভযের উপরই
মারাত্মকভাবে পরে। বিশেষত দূষিত বায়ুর মধ্যে থাকার কারণে জন্মের সময়
বাচ্চার নানাবিধ শারীরিক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা চোখে পরার মতো বৃদ্ধি পায়।
তাই ভাবী মায়েরা সাবধান!
সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা পত্রে গবেষকরা এমনটা দাবী করেছেন যে গর্ভবতী
হওয়ার আগের একমাস এবং পরের একমাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময় মা যদি
দিনের বেশিটা সময় দূষণের মধ্যে কাটান, তাহলে ফিটাসের উপর বিরূপ প্রভাব পরে।
সেই সঙ্গে মায়ের শরীরের অন্দরেও নেতিবাচক পরিবর্তন হতে শুরু করে। যে কারণে
গর্ভাবস্থায় এবং প্রসবের সময় নানাবিধ জটিলতা হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।
এখানে থেমে না থেকে গবেষকরা আরও কয়েকধাপ এগিয়ে এমনটাও বলেছেন যে বায়ু
দূষণের মাত্রা য়ে যে দেশে বেশি, যেমন আমাদের দেশে, সেখানে জন্মের সময়
বাচ্চার মস্তিষ্কের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।
দূষিত বায়ু মানেই তাতে ছোট ছোট ক্ষতিকর পার্টিকাল এবং সেই সঙ্গে
গ্রিন হাইস গ্যাস। এই টক্সিকেরা যখন শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ
করে, তখন তা প্রথমেই ক্ষতি করে ফুসফুসের। তারপর রক্তে মিশে গিয়ে শরীরে
প্রতিটি কোণায় পৌঁছে যায়। গর্ভাবস্থায় বাচ্চা যেহেতু তার সব পুষ্টি পায়
মায়ের রক্ত থেকে, তাই এই দূষিত উপাদানগুলি ফিটাসের অন্দরে চলে যাওয়ার
সুযোগ পেয়ে যায়। আর এমনটা যখনই ঘটে, তখন থেকেই বিপদের আশঙ্কা বাড়তে শুরু
করে। প্রসঙ্গত, বেশ কিছু মাস আগে প্রকাশিত হওয়া একটি রিপোর্ট অনুসারে
আমাদের দেশে পলিউশান রেট এত মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে যে এই কারণে রোগভোগের
আশঙ্কা প্রায় ৯.৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি ল্যান্সেট পত্রিকায়
প্রকাশিত রিপোর্টেও একই ছবি উঠে এসেছে। ইন্ডিয়া স্টেট-লেভেল ডিজিজ বার্ডেন
শীর্ষক সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে দূষণের মাত্রা আমাদের দেশে যেহারে বাড়ছে
তাতে এর প্রভাবে অসুস্থ হয়ে পরার হার ক্রমশ ১৭ শতাংশ গিয়ে দাঁড়বে। আর
এমনটা হলে মা এবং বাচ্চার জন্য যে কতটা বিপদের, তা নিশ্চয় আর আলাদা করে বলে
দিতে হবে না।
বায়ু দূষণের কারণে যে কেবল ভাবী মা এবং ফিটাসেরই ক্ষিত হয়, এমন নয়। বিষ
বাষ্প শরীরে প্রবেশ করতে থাকলে দেখা দেয় আরও নানা সমস্যা, যেমন...
১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারে দুর্বল হয়ে যায়:
সুস্থ থাকতে ইমিউন সিস্টেমের চাঙ্গা থাকাটা একান্ত প্রয়োজন। কিন্তু একাধিক
গবেষণায় দেখা গেছে বায়ু দূষণের কারণে প্রথমেই শরীরের যে ক্ষতিটা হয়, তা
রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা একেবারে দুর্বল হয়ে যায়। ফলে নানাবিধ রোগ এসে
বাসা বাঁধতে শুরু করে শরীরে। এমন পরিস্থিতিতে শরীরকে বাঁচাতে নিয়মিত
সাইট্রাস ফাল খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। কারণ পাতি লেবু, মৌসম্বি
লেবু এবং কমলা লেবুর মতো সাইট্রাস ফলে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি থাকে, যা
রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে চাঙ্গা করে তুলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
২. অ্যালার্জির প্রকোপ বৃদ্ধি পায়:
অনেক সময়ই বাতাসে উপস্থিত ক্ষতিকর ডাস্ট পার্টিকেলরা শ্বাস-প্রশ্বাসের
মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে দেহের অন্দরে এমন পরিবর্তন ঘটাতে শুরু করে যে
অ্যালার্জির মতো রোগের প্রকোপ মারাত্মক বৃদ্ধি পায়। এমনকী অনেকে তো
বায়ু দূষণের কারণে ক্রনিক হাঁচি-কাশির মতো সমস্যাতেও আক্রান্ত হয়ে পরেন।
এমনটা যাতে আপনার সঙ্গে না ঘটে, তা সুনিশ্চিত করতে বাড়ির থেকে বেরলেই
মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। না হলে কিন্তু বেজায় বিপদ!
৩. ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতি হয়:
যেমনটা আগেও আলোচনা করা হয়েছে যে বিষ বাষ্প আমাদের লাং-কেই একেবারে প্রথমে
আক্রামণ করে থাকে। তাই তো ধীরে ধীরে ফুসফুসের কর্মক্ষমতা কমতে শুরু করে।
সেই সঙ্গে অ্যাস্থেমার মতো নানাবিধ রেসপিরেটারি ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার
আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে এমন খাবার খেতে
হবে, যাতে ফুসফুসের ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার মাত্রা কিছুটা হলেও কমে।
৪. প্রিম্যাচিওর ডেথ রেট বৃদ্ধি পাচ্ছে:
সরকারি-বেসরকারি পরিসংখ্যান ঘাঁটলেই জানতে পারবেন গত এক দশকে আমাদের দেশে
কী হারে জন্মকালীন মৃত্যুহার বেড়েছে। প্রিম্যাচিওর ডেথ রেট বৃদ্ধি পাওয়ার
পিছনে বিশেষজ্ঞরা অনেকাংশেই বায়ু দূষণকে দায়ি করছেন। কারণ যেমনটা আগেই
আলোচনা করা হয়েছে যে আজকের দিনে মায়েরাও কর্মরত। ফলে তাদের গর্ভাবস্থাতেও
অফিস যেতে হয়। আর এমনটা করার কারণে স্বাভাবিকভাবেই দিনের মধ্যে কম করে ২
ঘন্টা মায়েদের বায়ু দূষণের মাঝে থাকতে হয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মা এবং
বাচ্চা, উভয়ের উপরই খারাপ প্রভাব পরে। প্রসঙ্গত, বেশ কিছু স্টাডি অনুসারে
আমাদের দেশে প্রায় ৬০০,০০০ জন পাঁচ বছরের কম বয়সি বাচ্চা, বায়ু দূষণের
কারণে সংক্রমণে আক্রান্ত হচ্ছেন, যেখানে প্রায় ২.২ মিলিয়ান বাচ্চা আক্রান্ত
হচ্ছে নানাবিধ ফুসফুসের রোগে।
৫. ব্রেন পাওয়ার কমে যায়:
ক্ষতিকর পার্টিকেলরা রক্তে মিশে গিয়ে যখন ধীরে ধীরে ব্রেনের অন্দরে পৌঁছে
যায়, তখন মস্তিষ্কের বিশেষ কিছু অংশে প্রদাহ বা ইনফ্লেমেশন এত মাত্রায়
বৃদ্ধি পায় যে কগনিটিভ ফাংশন কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে বুদ্ধি, মনযোগ এবং
স্মৃতিশক্তিও কমে যেতে থাকে, বিশেষত বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এমনটা বেশি মাত্রায়
হয়।
COMMENTS