বর্তমানে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা দ্রুতই বাড়ছে। ডায়াবেটিস নিয়ে কিছু ভুল ধারণা ও সঠিক তথ্য । ডায়াবেটিস সংক্রান্ত কিছু ভুল ধারণা- ...
বর্তমানে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা দ্রুতই বাড়ছে। ডায়াবেটিস নিয়ে কিছু ভুল ধারণা ও সঠিক তথ্য ।
ডায়াবেটিস সংক্রান্ত কিছু ভুল ধারণা-
১. ডায়াবেটিস ছোঁয়াচে রোগ
২. ডায়াবেটিস একটি অভিশাপ
৩. শুধু ধনীদের ডায়াবেটিস হয়
৪. শুধু মোটাদের ডায়াবেটিস হয়
৫. শুধু বয়স্কদের ডায়াবেটিস হয়
৬. ইন্সুলিন নেয়া অত্যন্ত কষ্টদায়ক
৭. ডায়াবেটিস প্রতিরোধ সম্ভব নয়
৮. শারীরিক মিলনে ডায়াবেটিস হয়
৯. ইন্সুলিন নিলে যৌন ক্ষমতা কমে যায়
১০. শুধু শহরের লোকদের ডায়াবেটিস হয়
১১. ডায়াবেটিস হলে বিশেষ ধরনের খাবার খেতে হয়
১২. ডায়াবেটিস হলে মাটির নীচের খাবার খাওয়া যাবে না
১৩. টক তিতা জাতীয় খাবার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কার্যকর
১৪. শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হলেই শুধু ইন্সুলিন নিতে হয়
১৫. রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে এলে ডায়াবেটিস ভালো হয়ে যায়
১৬. ডায়াবেটিস আক্রান্ত শিশুদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি আর হয় না
১৭. একবার ইন্সুলিন নিতে শুরু করলে সারা জীবন ইন্সুলিন নিতেই হয়
১৮. ডায়াবেটিস আক্রান্ত মায়ের সন্তান ডায়াবেটিস নিয়েই জন্মগ্রহণ করে
উপরের সব কথাগুলো ভ্রান্ত এবং প্রচলিত মিথ্যা সুতরাং ধারণা ও শোনা কথায় কান দেয়া যাবে না।
ডায়াবেটিস সংক্রান্ত ভুল ধারণাগুলোর বিশ্লেষণ
১. তিন রকমের ডায়াবেটিস
বিভিন্ন
রকমের ডায়াবেটিস আছে, প্রধান হচ্ছে টাইপ-১ ও টাইপ-২ এবং গর্ভাবস্থার
ডায়াবেটিস। প্রতিটা ধরনেরই আলাদা কারণ। এদের নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিও আলাদা।
যদি কারও ডায়াবেটিস হয়ে যায় তাহলে তা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতিদিন তাকে
সচেষ্ট থাকতে হবে। সব ধরনের ডায়াবেটিসই জটিল ও গুরুতর। শুধুমাত্র
গর্ভাবস্থার ডায়াবেটিস বাচ্চার জন্মের পরই ভালো হয়ে যায়।
২. ডায়াবেটিস কী ছোঁয়াচে ?
না,
ডায়াবেটিস কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। বিশেষ করে জিনগত কারণে টাইপ-২
ডায়াবেটিস হতে পারে। প্রচলিত এসব ধারণায় বিশ্বাস না রেখে চিকিৎসকের
পরামর্শে পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে নিন। যদি ডায়াবেটিস ধরা পড়ে
তাহলে খাস্যাভ্যাস ও জীবনযাপন প্রণালীর পরিবর্তন, নিয়মিত ঔষধ গ্রহণ এবং
নিয়মিত পর্যবেক্ষণের মধ্যে থেকে নিজেকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করুন।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রেখে সম্পুর্ণ সুস্থ জীবনযাপন করা যায়।
৩. মা-বাবার ডায়াবেটিস থাকলে কী হবে?
কারও
বাবার ডায়াবেটিস থাকলে তার ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা অন্যদের তুলনায়
ছয়গুণ বেশি। মায়ের ডায়াবেটিস থাকলে এ আশঙ্কা বাড়বে তিনগুণ আর মা-বাবা
উভয়ের থাকলে এ আশঙ্কা ২০ গুণ বেড়ে যাবে। সুতরাং ডায়াবেটিসে বংশগত প্রভাব
কিছুটাতো আছেই।
৪. ডায়াবেটিসে মিষ্টি বেশি খেলে কী হয় ?
সরাসরি
মিষ্টি খাওয়ার সঙ্গে ডায়াবেটিস হওয়ার কোনো যোগসূত্র নেই। মিষ্টি বেশি
না খেলেও ডায়াবেটিস হতে পারে। আসলে পারিবারিক ইতিহাস, ওজন বৃদ্ধি,
অস্বাস্থ্যকর খাবার, শারীরিক নিস্ক্রিয়তা ইত্যাদি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি
বাড়ায়। মিষ্টি বেশি খেলে ওজন বাড়ার আশঙ্কা থাকে কারণ মিষ্টি দ্রব্যে
ক্যালরি বেশি আর এ কারণে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কিছুটা বেড়বে।
৫. ডায়াবেটিস হলে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব নয়
করছেন।
শৃঙ্খলা সাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়াম এই ৩টি হচ্ছে
ডায়াবেটিস নিয়ে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার উপায়। শর্করা সুনিয়ন্ত্রিত
থাকলে এবং সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করলে একজন ডায়াবেটিস রোগী সবার মতোই
স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন। ওয়াসিম আকরামের মতো বিশ্বের অনেক তারকা
ব্যক্তিত্ব ডায়াবেটিস নিয়ে চমৎকার জীবনযাপন।
৬. ইন্সুলিন কী শেষ চিকিৎসা?
ব্যপারটা
এমন নয় যে ইন্সুলিন দেয়া হচ্ছে মানে আপনার অবস্থা খুব জটিল। ইন্সুলিন
একজন ডায়াবেটিস রোগীর জীবনে যে কোন সময়েই লাগতে পারে। বিশেষ করে
গর্ভাবস্থায়, যেকোন বড় অস্ত্রপাচারের আগে-পরে, কোন গুরুতর রোগে হাসপাতালে
থাকাকালীন বা মারাত্মক কোনো সংক্রমনের সময়, কিডনি বা যকৃতের ইত্যাদি
জটিলতায় ইন্সুলিনই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও নিরাপদ চিকিৎসা। এ ছাড়া কোনো
কারণে রক্তে শর্করা অনেক বেড়ে গেলেও ইন্সুলিন দরকার হয়।
৭. ডায়াবেটিস রোগীদের খাবার
কম
চর্বি, পরিমিত লবণ আর চিনি; এর সঙ্গে পূর্ণ দানাযুক্ত খাদ্য, শাকসবজি ও
ফলমূল এগুলোর মিশ্রণই হতে পারে আদর্শ খাবার। তথাকথিত ডায়াবেটিক খাবারে
অতিরিক্ত কোন উপকার পাওয়া যায় না। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি
খাবার তালিকা সুস্থ মানুষের স্বাস্থ্যকর খাবার তালিকা থেকে ভিন্ন কিছুই
নয়।
৮. মোটা হওয়াটাই কী ডায়াবেটিসের কারণ ?
অতিরিক্ত
ওজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার একটি ঝুঁকি কেবল, এক্ষেত্রে পারিবারিক
ইতিহাস, জাতিসত্ত্বা, বয়স, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার জন্য নিয়ামক
হিসাবে কাজ করে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে অনেকেই এই ধারণা পোষণ করেন যে, ওজন বেশি
মানে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। অথচ অনেক মোটা মানুষের
কিন্তু ডায়াবেটিস নেই। আবার অনেক ডায়াবেটিস রোগীর ওজন স্বাভাবিক, এমনকি
স্বাভাবিকের চেয়েও কম।
৯. ইন্সুলিনে কি পার্শ্বপতিক্রিয়া আছে?
আধুনিক
সিরিঞ্জ ব্যবহার করলে তাতে ব্যথা হয় না বললেই চলে, আর রোগী যদি ইন্সুলিন
নেয়ার ১৫-২০ মধ্যে খাবার গ্রহণ করেন তবে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হওয়ার আশঙ্কা
থাকে না।
১০. কোন ফল কতবার, কী পরিমাণে খাবেন ?
অবশ্যই
ফল স্বাস্থ্যকর খাদ্য। এতে আশ ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল
রয়েছে; কিন্তু ফলে শর্করাও থাকে, যাকে অবশ্যই খাদ্য তালিকার সঙ্গে সমন্বয়
করতে হবে। প্রয়োজনে পুষ্টিবিদের সঙ্গে আলাপ করে ঠিক করুন, কোন ফল কতবার,
কী পরিমাণে খাবেন।
১১. ডায়াবেটিস সম্পূর্ণ ভাল হয় কী ?
ডায়াবেটিস
কোনো নিরাময়যোগ্য রোগ নয় এটি কেবল নিয়ন্ত্রণ করা যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞান
অনুযায়ী, টাইপ-১ বা টাইপ-২ কোনো ডায়াবেটিসই চিকিৎসায় সম্পূর্ণ ভালো হয়
না।
১২. ইন্সুলিন কতদিন নিতে হবে ?
টাইপ-১
ডায়াবটিস, কিডনি ও যকৃতের গুরুতর সমস্যা এবং সর্বোচ্চমাত্রায় ঔষধ
ব্যবহার করেও যদি শর্করা নিয়ন্ত্রিত না হয় এসব ক্ষেত্রে সব সময়ই
ইন্সুলিন ব্যবহার করতে হবে। তবে ইন্সুলিনের প্রয়োজনীয়তা শেষে তার
পরিবর্তে ঔষধ খাওয়া যেতে পারে গর্ভাবস্থা কেটে যাওয়ার পর বা
অস্ত্রপাচারের ঘা শুকিয়ে যাওয়ার পর ইন্সুলিন বন্ধ করে আবার ঔষধ খাওয়া
যায়।
প্রচলিত
এসব ধারণায় বিশ্বাস না রেখে ডায়াবেটিস হতে পারে এমনটা সন্দেহ হওয়া
মাত্র চিকিৎসকের পরামর্শে পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে নিন এবং
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করুন।
COMMENTS