৬ নিয়ম মেনে চললে- প্রসূতির কাছে এক আতঙ্কের নাম সিজার। এক দু’জন ব্যাতিক্রম বাদে পরিবারের কেউই চান না প্রসূতির সিজার হোক। তবু দিন দিন সিজার...
৬ নিয়ম মেনে চললে- প্রসূতির কাছে এক আতঙ্কের নাম সিজার। এক দু’জন
ব্যাতিক্রম বাদে পরিবারের কেউই চান না প্রসূতির সিজার হোক। তবু দিন দিন
সিজারের পরিমাণ বাড়ছে। উন্নত দেশে সিজারকে অনুৎসাহিত করা হলেও আমাদের দেশে
কার্যত তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।
তদুপরি মা ও তার গর্ভস্থ সন্তানের নিরাপত্তাসহ নানা দিক বিবেচনায় রেখে
সিজার করতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে। সিজার বাড়ার পেছনে রোগীর স্বজনরা
ডাক্তারদের বাণিজ্যিক মনোভাবকে দায়ী করলেও সিজার করানোর ক্ষেত্রে
অন্ত:স্বত্ত্বা ও অভিভাবকদের দায়ও কম নয়। অনেকে প্রসবকালীন বেদনা থেকে
বাঁচতে সিজারের সিদ্ধান্ত নেন।
মাতৃমৃত্যু ও স্বাস্থ্যসেবা জরিপ -২০১৬ অনুযায়ী, ২০১০ সালে দেশে মোট সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে সিজারের পরিমাণ ছিল ১২%। কিন্তু ২০১৬ সালে তা এসে দাঁড়ায় ৩১% এ। অর্থাৎ মাত্র কয়েক বছরে সিজারের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় তিনগুণ।
প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে মোট সন্তান প্রসবের ৮৩ শতাংশই হচ্ছে সিজারিয়ান পদ্ধতিতে। সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সিজারিয়ান প্রসবের হার ৩৫ শতাংশ। এখনও ৫০ ভাগের বেশি প্রসব বাড়িতে হয়।
তবে চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, মায়ের গর্ভাবস্থায় সাধারণ কিছু নিয়ম মেনে চললে সিজার থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। নারী গর্ভবতী হওয়ার পর থেকেই যদি কিছু নিয়ম মেনে চলে তাহলে স্বাভাবিক প্রসব হওয়া সম্ভব। একুশে টেলিভিশন অনলাইনের পাঠকদের জন্য সেই নিয়মগুলো তুলে ধরা হলো-
প্রথমত, মায়ের মধ্যে এই আত্মবিশ্বাসবোধ থাকতে হবে যে, তিনি স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব করবেন।
দ্বিতীয়ত, lugel exercise নামে এক ধরণের ব্যায়াম আছে। যাতে পেলভিক এলাকার মাংসপেশী সংকোচন ও প্রসারণ করার মাধ্যমে কটি দেশের প্রসারণ ক্ষমতা বাড়ানো হয়।
তৃতীয়ত, গভীরভাবে শ্বাস নিয়ে প্রশ্বাস ছাড়লে ফুসফুসের ক্ষমতা বাড়ে। অন্ত:স্বত্ত্বার ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট বড় একটি সমস্যা। তাই এ পদ্ধতি অবলম্বন করে নিস্কৃতি পেতে পারেন।
চতুর্থত, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত হাঁটলে সাঁতার কাটলে ও হালকা কিছু ব্যায়াম করলে অন্ত:স্বত্ত্বা শারীরিকভাবে শক্ত-সামর্থ্যবান থাকেন। যা স্বাভাবিক সন্তান প্রসবে সহায়ক হয়।
পঞ্চমত, নিয়মিত চেকআপের মাধ্যমে কোনো রোগ থাকলে যেমন হাইপার টেনশন ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকলে মা নরমাল ডেলিভারির চেষ্টা করতে পারেন।
ষষ্ঠত, ডাক্তারের দেওয়া খাদ্য তালিকা অনুস্মরণ করলে সন্তান খুব বড়ও হয় না আবার ছোটও হয় না। ফলে স্বাভাবিক প্রসবের সম্ভাবনা বেশি থাকে।
না বললেই নয়, সিজারে সন্তান প্রসব করতে গিয়ে মায়ের জীবন যেমন ঝুঁকির মুখে পড়ে তেমনি পরবর্তীতে মাকে নানা ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতার শিকার হতে হয়। তাই সিজারকে `না ` বলাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।
লেখক: ডা. কাজী ফয়েজা অাক্তার, এমবিবিএস,এমসিপিএস, এফসিপিএস, কনসালটেন্ট, ইমপালস হাসপাতাল।
অণ্ডকোষে ব্যথার নানা কারণ
অণ্ডকোষে ব্যথা হলে কিংবা অণ্ডথলির (যে থলির মধ্যে অণ্ডকোষ থাকে) একপাশে বা দু’পাশে ব্যথা হলে সেটাকে অবশ্যই গুরুত্বের সাথে নিতে হবে। যেকোনো বয়সের পুরুষদের এমনকি নবজাতকেরও অণ্ডথলিতে ব্যথা করতে পারে। অণ্ডকোষ হলো পুরুষদের প্রজনন অঙ্গ।
শরীরে দু’টি অণ্ডকোষ থাকে। এই অঙ্গ বা গ্রন্থিগুলো খুবই সংবেদনশীল। খুব সামান্য আঘাতেও ব্যথা হতে পারে। অণ্ডকোষ বা অণ্ডথলিতে যেকোনো ধরনের ব্যথা হলেই চিকিৎসাগত সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।
অণ্ডকোষ বা অণ্ডথলিতে ব্যথা হঠাৎ করে হতে পারে অথবা তীব্র হতে পারে। এ ব্যথা আঘাতের কারণে হতে পারে, ব্যথার সাথে অণ্ডকোষ ফুলে যেতে পারে। রোগীর বমি বমি ভাব কিংবা বমি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
অণ্ডথলিতে ব্যথার সাথে রোগীর অণ্ডথলিতে চাকা, জ্বর, অণ্ডথলির ত্বক লাল, প্রস্রাবে রক্ত, মূত্রনালী পথে অস্বাভাবিক নিঃসরণ ও গলা ফুলে যাওয়া প্রভৃতি উপসর্গ থাকলে যতদ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
যদি সময়মতো চিকিৎসা করা না হয় তাহলে বন্ধ্যাত্ব ও পুরুষত্বহীনতা ঘটতে পারে। রোগীর তীব্র বা দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা থাকবে। অনেক সময় রোগীর অপারেশন করে অণ্ডকোষ ফেলে দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে অণ্ডকোষের ব্যথার উৎস অণ্ডকোষ নয়, ব্যথা শুরু হয় অণ্ডথলি এলাকায়। অণ্ডকোষের কাজ হলো শুক্রাণু তৈরি করা। তাই অণ্ডকোষকে সুস্থ রাখা অপরিহার্য।
প্রতিটি অণ্ডকোষের উপরে থাকে এপিডিডাইমিস। এই এপিডিডাইমিসে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ হয়। অণ্ডথলি হচ্ছে এমন একটি থলি যা অণ্ডকোষ ও এপিডিডাইমিসকে সুরক্ষা দেয়। অণ্ডকোষে ব্যথার কারণ, অণ্ডকোষ কিংবা অণ্ডথলির ব্যথার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে :
সংক্রমণ বা প্রদাহ : অণ্ডকোষের প্রদাহ বা সংক্রমণের সাথে সবচেয়ে যে সাধারণ অবস্থাটি সম্পৃক্ত তা হলো এপিডিডাইমাইটিস। এপিডিডাইমাইটিস হলো একটি বা দু’টি এপিডিডাইমিসের প্রদাহ।
এপিডিডাইমিসে সংক্রমণ হলে সেই সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে অণ্ডকোষে। এটা যেকোনো বয়সে হতে পারে এবং হঠাৎ করে হতে পারে। সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ হয় তরুণ ও যুবকদের। এ সংক্রমণের প্রধান কারণ হলো যৌনবাহিত ব্যাকটেরিয়া, বিশেষ করে ক্ল্যমাইডিয়া ও গনোরিয়া।
আঘাত: অণ্ডকোষের আঘাতজনিত ব্যথার সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো স্পোর্টস ইনজুরি বা খেলাধুলাজনিত আঘাত। যদি আঘাত পাওয়ার পর ব্যথা এক ঘণ্টার বেশি স্থায়ী থাকে তাহলে জরুরি চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। আঘাত পাওয়ার পর একটা চাকা দেখা দিতে পারে। আবার নাও পারে। আঘাত পাওয়ার পর অবশ্যই অণ্ডকোষ পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
অণ্ডকোষে টরসন বা প্যাঁচ খাওয়া: অণ্ডকোষে প্যাঁচ খাওয়া একটি জরুরি অবস্থা। এ ক্ষেত্রে অণ্ডকোষে রক্ত সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়। অণ্ডকোষে প্যাঁচ খেলে অণ্ডথলিতে ব্যথা করে ও ফুলে যায়। যদি ৫-৬ ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসা করা না হয় তাহলে আক্রান্ত অণ্ডকোষের টিস্যু মরে যেতে পারে।
যদিও এ সমস্যা নবজাতক এবং বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেদের (১৮ বছরের নিচে) বেশি হয়। তবে এটা যেকোনো বয়সে হতে পারে। অণ্ডকোষের উপাঙ্গে প্যাঁচ খেলেও অণ্ডকোষে প্যাঁচ খাওয়ার মতো একই অনুভূতি হতে পারে।
অণ্ডকোষে প্যাঁচ খেলে জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন হয় কিন্তু অণ্ডকোষের উপাঙ্গে প্যাঁচ খেলে সেটা জরুরি অবস্থা নয়। কোনো জটিলতা ছাড়াই ব্যথা সাধারণত এক সপ্তাহ স্থায়ী থাকে। অন্য যেসব কারণে অণ্ডথলি এলাকায় ব্যথা হয় :
অণ্ডকোষে টিউমার: অণ্ডকোষের টিউমারগুলো সাধারণত ব্যথা ঘটায় না, তবে এটা সম্ভব। যেহেতু অণ্ডকোষের ব্যথা অল্পবয়সী পুরুষদের (১৮ থেকে ৩২ বছর বয়সের মধ্যে) বেশি হয় তাই অণ্ডকোষে কোনো চাকা বা দলা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ইনগুইনাল হার্নিয়া: এ ক্ষেত্রে অন্দ্রের কিছু অংশ কুঁচকির মাঝামাঝি এক দুই ইঞ্চি উপরে চলে আসে। কুঁচকির উপরটা গোল হয়ে ফুলে ওঠে, মাঝে মাঝে শক্ত হয় ও ব্যথা হয়। কিছুদিন পর গোলাকার ফোলাটি অণ্ডথলিতে নেমে আসে। হার্নিয়া চিকিৎসা করা না হলে মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। অপারেশনের মাধ্যমে হার্নিয়ার চিকিৎসা করা হয়।
পুডেনডাল নার্ভের ক্ষতি: পুডেনডাল নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হলে অসাড় অনুভূতি কিংবা ব্যথা হতে পারে। যারা অতিরিক্ত বাইসাইকেল চালান, চাপের কারণে তাদের পুডেনডাল নার্ভ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পুডেনডাল নার্ভ যৌনাঙ্গ, মূত্রনালি, মলদ্বার এবং অণ্ডথলি ও মলদ্বারের মধ্যবর্তী এলাকাতে অনুভূতি জোগায়। তাই এসবের যেকোনো স্থানে ব্যথা হতে পারে।
শল্য চিকিৎসা: তলপেটের যেকোনো অপারেশনের কারণে (যেমন হার্নিয়া রিপেয়ার ও ভ্যাসেকটমি) অণ্ডকোষে সাময়িক ব্যথা হতে পারে ও অণ্ডকোষ ফুলে যেতে পারে। অপারেশনের পরে এ ধরনের কোনো ব্যথা হলে সাথে সাথে চিকিৎসককে অবহিত করবেন।
ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হলে কিংবা বারবার ব্যথা হলে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। কিডনিতে পাথর, কিডনিতে পাথরের কারণে সাধারণত পেটে ব্যথা হয়। তবে ব্যথা অণ্ডকোষে ছড়িয়ে পড়তে পারে। যদি অণ্ডথলিতে তীব্র ব্যথা হয় এবং হঠাৎ করে ব্যথা হয় তাহলে ভালো করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে ব্যথার উৎস কিডনিতে পাথর কি না।
ফোলা ও অস্বস্তি: অণ্ডথলি এলাকায় বিভিন্ন কারণে ফোলা থেকে অস্বস্তি হতে পারে। এসব কারণের মধ্যে রয়েছে ভ্যারিকোসিল, হাইড্রোসিল এবং স্পারম্যাটোসিল। যদি হাইড্রোসিল (অণ্ডকোষের দুই আবরণের মধ্যে অস্বাভাবিক পানি জমা) সংক্রমিত হয় তাহলে সেখান থেকে এপিডিডাইমিসের প্রদাহ হতে পারে এবং এর ফলে অণ্ডকোষে ব্যথা হতে পারে।
পুরুষাঙ্গ শক্ত হওয়া, যদি পুরুষাঙ্গ শক্ত হয়ে ওঠে। কিন্তু বীর্যপাত না ঘটে তাহলে কখনো কখনো অণ্ডকোষে ভোতা ধরনের ব্যথা হতে পারে। সাধারণত কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কিংবা বীর্যপাত ঘটালে ব্যথা চলে যায়।
মাতৃমৃত্যু ও স্বাস্থ্যসেবা জরিপ -২০১৬ অনুযায়ী, ২০১০ সালে দেশে মোট সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে সিজারের পরিমাণ ছিল ১২%। কিন্তু ২০১৬ সালে তা এসে দাঁড়ায় ৩১% এ। অর্থাৎ মাত্র কয়েক বছরে সিজারের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় তিনগুণ।
প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে মোট সন্তান প্রসবের ৮৩ শতাংশই হচ্ছে সিজারিয়ান পদ্ধতিতে। সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সিজারিয়ান প্রসবের হার ৩৫ শতাংশ। এখনও ৫০ ভাগের বেশি প্রসব বাড়িতে হয়।
তবে চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, মায়ের গর্ভাবস্থায় সাধারণ কিছু নিয়ম মেনে চললে সিজার থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। নারী গর্ভবতী হওয়ার পর থেকেই যদি কিছু নিয়ম মেনে চলে তাহলে স্বাভাবিক প্রসব হওয়া সম্ভব। একুশে টেলিভিশন অনলাইনের পাঠকদের জন্য সেই নিয়মগুলো তুলে ধরা হলো-
প্রথমত, মায়ের মধ্যে এই আত্মবিশ্বাসবোধ থাকতে হবে যে, তিনি স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব করবেন।
দ্বিতীয়ত, lugel exercise নামে এক ধরণের ব্যায়াম আছে। যাতে পেলভিক এলাকার মাংসপেশী সংকোচন ও প্রসারণ করার মাধ্যমে কটি দেশের প্রসারণ ক্ষমতা বাড়ানো হয়।
তৃতীয়ত, গভীরভাবে শ্বাস নিয়ে প্রশ্বাস ছাড়লে ফুসফুসের ক্ষমতা বাড়ে। অন্ত:স্বত্ত্বার ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট বড় একটি সমস্যা। তাই এ পদ্ধতি অবলম্বন করে নিস্কৃতি পেতে পারেন।
চতুর্থত, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত হাঁটলে সাঁতার কাটলে ও হালকা কিছু ব্যায়াম করলে অন্ত:স্বত্ত্বা শারীরিকভাবে শক্ত-সামর্থ্যবান থাকেন। যা স্বাভাবিক সন্তান প্রসবে সহায়ক হয়।
পঞ্চমত, নিয়মিত চেকআপের মাধ্যমে কোনো রোগ থাকলে যেমন হাইপার টেনশন ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকলে মা নরমাল ডেলিভারির চেষ্টা করতে পারেন।
ষষ্ঠত, ডাক্তারের দেওয়া খাদ্য তালিকা অনুস্মরণ করলে সন্তান খুব বড়ও হয় না আবার ছোটও হয় না। ফলে স্বাভাবিক প্রসবের সম্ভাবনা বেশি থাকে।
না বললেই নয়, সিজারে সন্তান প্রসব করতে গিয়ে মায়ের জীবন যেমন ঝুঁকির মুখে পড়ে তেমনি পরবর্তীতে মাকে নানা ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতার শিকার হতে হয়। তাই সিজারকে `না ` বলাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।
লেখক: ডা. কাজী ফয়েজা অাক্তার, এমবিবিএস,এমসিপিএস, এফসিপিএস, কনসালটেন্ট, ইমপালস হাসপাতাল।
অণ্ডকোষে ব্যথার নানা কারণ
অণ্ডকোষে ব্যথা হলে কিংবা অণ্ডথলির (যে থলির মধ্যে অণ্ডকোষ থাকে) একপাশে বা দু’পাশে ব্যথা হলে সেটাকে অবশ্যই গুরুত্বের সাথে নিতে হবে। যেকোনো বয়সের পুরুষদের এমনকি নবজাতকেরও অণ্ডথলিতে ব্যথা করতে পারে। অণ্ডকোষ হলো পুরুষদের প্রজনন অঙ্গ।
শরীরে দু’টি অণ্ডকোষ থাকে। এই অঙ্গ বা গ্রন্থিগুলো খুবই সংবেদনশীল। খুব সামান্য আঘাতেও ব্যথা হতে পারে। অণ্ডকোষ বা অণ্ডথলিতে যেকোনো ধরনের ব্যথা হলেই চিকিৎসাগত সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।
অণ্ডকোষ বা অণ্ডথলিতে ব্যথা হঠাৎ করে হতে পারে অথবা তীব্র হতে পারে। এ ব্যথা আঘাতের কারণে হতে পারে, ব্যথার সাথে অণ্ডকোষ ফুলে যেতে পারে। রোগীর বমি বমি ভাব কিংবা বমি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
অণ্ডথলিতে ব্যথার সাথে রোগীর অণ্ডথলিতে চাকা, জ্বর, অণ্ডথলির ত্বক লাল, প্রস্রাবে রক্ত, মূত্রনালী পথে অস্বাভাবিক নিঃসরণ ও গলা ফুলে যাওয়া প্রভৃতি উপসর্গ থাকলে যতদ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
যদি সময়মতো চিকিৎসা করা না হয় তাহলে বন্ধ্যাত্ব ও পুরুষত্বহীনতা ঘটতে পারে। রোগীর তীব্র বা দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা থাকবে। অনেক সময় রোগীর অপারেশন করে অণ্ডকোষ ফেলে দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে অণ্ডকোষের ব্যথার উৎস অণ্ডকোষ নয়, ব্যথা শুরু হয় অণ্ডথলি এলাকায়। অণ্ডকোষের কাজ হলো শুক্রাণু তৈরি করা। তাই অণ্ডকোষকে সুস্থ রাখা অপরিহার্য।
প্রতিটি অণ্ডকোষের উপরে থাকে এপিডিডাইমিস। এই এপিডিডাইমিসে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ হয়। অণ্ডথলি হচ্ছে এমন একটি থলি যা অণ্ডকোষ ও এপিডিডাইমিসকে সুরক্ষা দেয়। অণ্ডকোষে ব্যথার কারণ, অণ্ডকোষ কিংবা অণ্ডথলির ব্যথার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে :
সংক্রমণ বা প্রদাহ : অণ্ডকোষের প্রদাহ বা সংক্রমণের সাথে সবচেয়ে যে সাধারণ অবস্থাটি সম্পৃক্ত তা হলো এপিডিডাইমাইটিস। এপিডিডাইমাইটিস হলো একটি বা দু’টি এপিডিডাইমিসের প্রদাহ।
এপিডিডাইমিসে সংক্রমণ হলে সেই সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে অণ্ডকোষে। এটা যেকোনো বয়সে হতে পারে এবং হঠাৎ করে হতে পারে। সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ হয় তরুণ ও যুবকদের। এ সংক্রমণের প্রধান কারণ হলো যৌনবাহিত ব্যাকটেরিয়া, বিশেষ করে ক্ল্যমাইডিয়া ও গনোরিয়া।
আঘাত: অণ্ডকোষের আঘাতজনিত ব্যথার সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো স্পোর্টস ইনজুরি বা খেলাধুলাজনিত আঘাত। যদি আঘাত পাওয়ার পর ব্যথা এক ঘণ্টার বেশি স্থায়ী থাকে তাহলে জরুরি চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। আঘাত পাওয়ার পর একটা চাকা দেখা দিতে পারে। আবার নাও পারে। আঘাত পাওয়ার পর অবশ্যই অণ্ডকোষ পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
অণ্ডকোষে টরসন বা প্যাঁচ খাওয়া: অণ্ডকোষে প্যাঁচ খাওয়া একটি জরুরি অবস্থা। এ ক্ষেত্রে অণ্ডকোষে রক্ত সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়। অণ্ডকোষে প্যাঁচ খেলে অণ্ডথলিতে ব্যথা করে ও ফুলে যায়। যদি ৫-৬ ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসা করা না হয় তাহলে আক্রান্ত অণ্ডকোষের টিস্যু মরে যেতে পারে।
যদিও এ সমস্যা নবজাতক এবং বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেদের (১৮ বছরের নিচে) বেশি হয়। তবে এটা যেকোনো বয়সে হতে পারে। অণ্ডকোষের উপাঙ্গে প্যাঁচ খেলেও অণ্ডকোষে প্যাঁচ খাওয়ার মতো একই অনুভূতি হতে পারে।
অণ্ডকোষে প্যাঁচ খেলে জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন হয় কিন্তু অণ্ডকোষের উপাঙ্গে প্যাঁচ খেলে সেটা জরুরি অবস্থা নয়। কোনো জটিলতা ছাড়াই ব্যথা সাধারণত এক সপ্তাহ স্থায়ী থাকে। অন্য যেসব কারণে অণ্ডথলি এলাকায় ব্যথা হয় :
অণ্ডকোষে টিউমার: অণ্ডকোষের টিউমারগুলো সাধারণত ব্যথা ঘটায় না, তবে এটা সম্ভব। যেহেতু অণ্ডকোষের ব্যথা অল্পবয়সী পুরুষদের (১৮ থেকে ৩২ বছর বয়সের মধ্যে) বেশি হয় তাই অণ্ডকোষে কোনো চাকা বা দলা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ইনগুইনাল হার্নিয়া: এ ক্ষেত্রে অন্দ্রের কিছু অংশ কুঁচকির মাঝামাঝি এক দুই ইঞ্চি উপরে চলে আসে। কুঁচকির উপরটা গোল হয়ে ফুলে ওঠে, মাঝে মাঝে শক্ত হয় ও ব্যথা হয়। কিছুদিন পর গোলাকার ফোলাটি অণ্ডথলিতে নেমে আসে। হার্নিয়া চিকিৎসা করা না হলে মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। অপারেশনের মাধ্যমে হার্নিয়ার চিকিৎসা করা হয়।
পুডেনডাল নার্ভের ক্ষতি: পুডেনডাল নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হলে অসাড় অনুভূতি কিংবা ব্যথা হতে পারে। যারা অতিরিক্ত বাইসাইকেল চালান, চাপের কারণে তাদের পুডেনডাল নার্ভ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পুডেনডাল নার্ভ যৌনাঙ্গ, মূত্রনালি, মলদ্বার এবং অণ্ডথলি ও মলদ্বারের মধ্যবর্তী এলাকাতে অনুভূতি জোগায়। তাই এসবের যেকোনো স্থানে ব্যথা হতে পারে।
শল্য চিকিৎসা: তলপেটের যেকোনো অপারেশনের কারণে (যেমন হার্নিয়া রিপেয়ার ও ভ্যাসেকটমি) অণ্ডকোষে সাময়িক ব্যথা হতে পারে ও অণ্ডকোষ ফুলে যেতে পারে। অপারেশনের পরে এ ধরনের কোনো ব্যথা হলে সাথে সাথে চিকিৎসককে অবহিত করবেন।
ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হলে কিংবা বারবার ব্যথা হলে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। কিডনিতে পাথর, কিডনিতে পাথরের কারণে সাধারণত পেটে ব্যথা হয়। তবে ব্যথা অণ্ডকোষে ছড়িয়ে পড়তে পারে। যদি অণ্ডথলিতে তীব্র ব্যথা হয় এবং হঠাৎ করে ব্যথা হয় তাহলে ভালো করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে ব্যথার উৎস কিডনিতে পাথর কি না।
ফোলা ও অস্বস্তি: অণ্ডথলি এলাকায় বিভিন্ন কারণে ফোলা থেকে অস্বস্তি হতে পারে। এসব কারণের মধ্যে রয়েছে ভ্যারিকোসিল, হাইড্রোসিল এবং স্পারম্যাটোসিল। যদি হাইড্রোসিল (অণ্ডকোষের দুই আবরণের মধ্যে অস্বাভাবিক পানি জমা) সংক্রমিত হয় তাহলে সেখান থেকে এপিডিডাইমিসের প্রদাহ হতে পারে এবং এর ফলে অণ্ডকোষে ব্যথা হতে পারে।
পুরুষাঙ্গ শক্ত হওয়া, যদি পুরুষাঙ্গ শক্ত হয়ে ওঠে। কিন্তু বীর্যপাত না ঘটে তাহলে কখনো কখনো অণ্ডকোষে ভোতা ধরনের ব্যথা হতে পারে। সাধারণত কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কিংবা বীর্যপাত ঘটালে ব্যথা চলে যায়।
COMMENTS